1. স্ত্রীর মোহরানা আদায় করেছেন কী ?
  2. মমিনুল ইসলাম মোল্লা
  3.  
  4. ইসলামী বিধান অনুযায়ী বিশ্বের মুসলমান নারী-পুরুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের নিয়ম অনুযায়ী বিবাহ মজলিসে স্ত্রীর প্রাপ্য মোহরানা ধার্য করা হয়। কেউ কেউ নগদ পরিশোধ করেন। অন্যরা স্ত্রীকে মন-প্রাণ দিয়ে ভালবাসলেও স্ত্রীর ন্যায্য দাবীর প্রতি উদাসীন।  তারা হয়তো জানেন না এ উদাসীনতার কারণে তাদের জন্য হয়তো জাহান্নামের আগুন অপেক্ষা করছে। বরের আর্থিক অবস্থার উপর নির্ভর করে মোহরানা নির্ধারণ করতে হবে।
    বেশি কমও নয়, আবার মাত্রাতিরিক্তও নয়। অর্থাৎ মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে। ( তাফসীর- কুরতবী; নিসা, ২০ ও ২১ আয়াত) স্ত্রীকে তালাক দিলেও তার ন্যায্য দাবী পূরণ দিতে হবে। স্বামী যদি দ্বিতীয় বিয়ে করে তাহলে প্রথম স্ত্রীর মোহরানা আগেই পরিশোধ করতে হবে। ১৯৫৫ সালে ঢাকা হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে, মোহরানার পবির্তে হিবা বিল এওয়াজ তখনই বৈধ হবে যখন স্ত্রী কোন প্রতিদান ছাড়াই স্বামীকে মোহরানা দান করে এবং পরে স্বামী স্ত্রীর দানের এওয়াজ স্বরুপ  কোন সম্পত্তি আলাদাভাবে দান করেন। কারণ এটা মুসলিম অইনে একটি বিশুদ্ধ হিবা বিল ।  হাদিসে বর্ণিত রয়েছে- পাঁচ ব্যক্তির উপর আল্লাহর ক্রোধ অবশ্যম্ভাবী। তাদের মধ্যে মোহরানা অনাদায়ী ব্যক্তি রয়েছে। এছাড়া স্ত্রীর উপর অত্যাচারী ব্যক্তিও রয়েছে। আমাদের দেশে বিবাহের সময় স্ত্রীকে দেয়া শাড়ি-চুড়ি ,গয়না-গাটির মূল্য বাবদ দেনমোহর থেকে উসুল হিসেবে কেটে রাখা হয়। প্রকৃতপক্ষে এগুলো বিয়েতে দেয়া উপহার বা উপঢৌকন , দেনমোহর নয়। সুতরাং এগুলোর মূল্য দেনমোহরের মোট টাকা থেকে বাদ দেয়া যাবে না।
  5. ১৯৬১ সালের পারিবারিক আইনের ১০ নং ধারা  অনুযায়ী মুসলিম বিবাহের ফলস্বরুপ যে অর্থ বা সম্পত্তি স্বামী তার স্ত্রীকে প্রদান করেন বা দিতে স্বীকার করেন সে অর্থ দেনমোহর নামে পরিচিত। আপনি যদি কোন আত্মীয়-স্বজন কিংবা আপন ভাইয়ের নিকট থেকেও ঋণ গ্রহণ করেন তাহলে  তা পরিশোধ করতে হবে। মোহরানাও একটি আইনগত দায় । এটি পরিশোধ না করলে আপনাকে ঋণী থাকতে হবে। দেনমোহরের সাথে ভরণপোষণের কোন সম্পর্ক নেই সুতরাং কেউ যদি বলে দেনমোহর হয়তো দেইনি এতদিন কত টাকা ভরন-পোষণ বাবদ খরচ করেছি তাইর কি কোন হিসেব আছে? তাহলে সেটি ভুল হবে।
  6.                 মোহরানার পরিমাণ নামমাত্র হলে চলবেনা। মোহরানা কমপক্ষে ১০ দিরহাম হতে হবে। ( বর্তমানে সৌদি আরবের মুদ্রা দিরহাম নয়) ১০ দিরহামকে ৫২ তোলা রুপার সমান হিসেবে ধরা হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ কত টাকা হবে তা নির্দিষ্ট নেই। রসুল সাঃ জনৈক ব্যক্তিকে মোহরানা বাবদ লোহার আংটি হলেও আনতে বলেন, তাতে অক্ষম হলে শুদ্ধভাবে কোরান শিক্ষা দেয়ার কথা বলেন। ( মুত্তাফাক্ক আলাইহ, মিশকাত-৩২০২)    রসুল সাঃ বলেছেন- বিবাহের সবচেয়ে বড় শর্ত হলো মোহর। (মিশকাত শরীফ,হা-৩১৪৩)। রসূল সাঃ বলেছেন যে ব্যক্তি কোন মেয়েকে মোহরানা দেয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে কিন্তু মোহরানা আদায় করার তার ইচ্ছে নেই, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে জিনাহকারী -ব্যাভিচারী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে। (মুসনাদে াাহমদ)
  7.                 পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ বলেছেন- হে নবী! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি। যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেছেল। ( আল আহযাব-৫০) সূরা আন নিসাতে বলা হয়েছে- যে ব্যক্তি স্বাধীন মুসলমান নারী বিয়ে করার সামর্থ রাখে না , সে তোমাদের অধিকারভূক্ত মুসলিম ক্রীতদাসদেরকে বিয়ে করবে। আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞাত রয়েছেন। মালিকের অনুমতিক্রমে তাদের বিয়ে কর এবং তাদেরকে মোহরানা দান কর। আন্য এক যায়গায় বলা হয়েছে -যখন তোমরা তাদেরকে মোহরনা প্রদান কর তাদেরকে স্ত্রী করার জন্য , কামনা বাসনা চরিতার্থ করার জন্য, কিংবা গুপ্ত প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্য নয়। যে ব্যক্তি বিশ্বাসের বিষয়ে অবিশ্বাস করে তার শ্রম বিফলে যাবে এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
  8. তবে আলেম -ওলামাগন এব্যাপারে সোচ্চার হতে পারেন। তারা ওয়াজ মাহফিল, জুম্মার খুৎবা, কিংবা অন্য কোন দাওয়াতী প্রেগ্রামে পুরুষদের মোহরানা আদায়ের ব্যাপারে তাদের কর্তব্যের কথা মনে করিয়ে দিতে পারেন। এতে স্ত্রীর পাাশাপাশি স্বামীরাই বেশি লাভবান হবেন। কেননা দুনিয়ায় অর্থিকভাব কেউ বিপদে পড়লে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু হাসরের কঠিন দিনে আমাদেরকে সাহায্য করার কেউ থাকবে না। আর স্ত্রী যদি স্বামীকে স্বেচ্ছায় মাফ করে দেন তাহলে স্বামী এ বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারেন। তবে জোর করে বা কৌশলে মাফ নেয়া যাবে না। আমরা যেন সবাই স্ত্রীর মোহরানা সংক্রান্ত দাবী মিটিয়ে পরকালীন বিপদ থেকে মুক্তি পেতে  পারি, আল্লাহ আমাদেরকে সে তৌফিক দান করুন, আমিন।
  9.  
  10. লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা, প্রভাষক ও সাংবাদিক, কুমিল্লা। ০১৭১১৭১৩২৫৭    সধসরহসড়ষষধয@ুধযড়ড়.পড়স
  11. ৬০০ ওয়ার্ডের অতিরিক্ত
  12. মোহরানা আদায় করা ফরজ। আমাদের সমাজে অনেক সময় বরের সামর্থের বাইরে দেনমোহর ধার্য করা হয়। তাই সকলের পক্ষে নগদ পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। ফলে স্বামীকে বাসর রাতেই স্ত্রীর কাছে নতি স্বীকার করে সময় নিতে হয় বা মাফ চেয়ে নিতে হয়। বাসর রাতে মোহরানা আদায় করাটা ভাল হলেও আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে  নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা যায়। ধর্মীয় নিয়ম অনুযাযী সাবালিকা হলেই  মেয়েকে বিয়ে দেয়া যায়। এক্ষত্রে ১৫/১৬ বছরের মেয়েও বিবাহের যোগ্য। ধরা যাক, ১৬ বছরের একটি মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর বাসর রাতেই স্বামী তাকে মোহরানা বাবদ ৫ লক্ষ টাকা দিলেন। মেয়েটি এ টাকা কোথায় রাখবে? হয়তো বাবা বা ভাইয়ের নিকট রাখবে; ১৮ বছরেররর নীচে হওয়ায় এ টাকা ব্যাংকেও রাখাাতে পারবে না। জমিও কিনতে পারবে না।  ভাই বা বাবার নিকট রাখা সম্পত্তি ভবিষ্যতে কতটুকু পাবেন তা প্রশ্ন সাপেক্ষে ব্যাপার। যদি ৫ বছর পর স্বামী তার স্ত্রীর নামে ব্যাংকে একটি একাউন্ট করে দেনমোহরের টাকাটা ফিক্সড করে রাখেন বা তার নামে কোন সম্পত্তি রেখে দেন তাহলে সেটি আরো কল্যাণকর হবে। এছাড়া দেনমোহরের টাকা আগে পরিশোধ করলে সামান্য কোন কারণে ঝগড়া-বিবাদ হলে স্বামী যে কোন সময় স্ত্রীকে বিদায় করে দিতে পারে। আর দেনমোহর বাকী থাকলে স্বামী বাসর রাতে দেনমোহর সম্পূর্ণভাবে আদায় করতে না পারলে স্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে তার সাথে দৈহিক যোগাযাগ রক্ষা করতে হবে। বিয়ের সময় দেনমোহর নির্দিষ্ট করা না গেলে অথবা কাবিন ছাড়া বিয়ে হলে এছাড়া স্ত্রী পরবর্তীতে দেনমোহর দাবী করতে পারবে না এমন শর্ত থাকলেও দেনমোহর নির্দিষ্ট করে তা আদায় করতে হবে। স্ত্রী মারা গেলেও স্বামীকে দেনেেমাহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে স্ত্রীর  উত্তরাধীকারীরা দেনমোহরের অর্থ পাবে। স্ত্রীর দেনমোহরের জন্য উত্তরাধীকারীরা মামলাও করতে পারেন। স্বামী মারা গেলেও স্বামীর সম্পত্তি থেকে তা তার উত্তরাধীকারগণ দিতে হবে।
  13. বাংলাদেশের নারী অধিকারবাদীরি নারীদের সম-অধিকার এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে বেশি অধিকার আদায়ে সচেতন। কিন্তু এ বিষয়টি যেহেতু যেহেতু ধর্মীয় সেহেতু তারা এব্যাপারে মাথা ঘামান না। তাদের কথা বাদ দিলেও আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী নেতৃবৃšেন্দরও রহস্যময় নিরবতা আমাদের অবাক করে।
  14.  


Post a Comment

0 Comments