বিনাদোষে তালাক : নির্যাতনের শামিল


বিনাদোষে তালাক : নির্যাতনের শামিল

মমিনুল ইসলাম মোল্লা

২৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারা বিশ্বে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। নারী নির্যাতনের বিভিন্ন উপায়ের মধ্যে বিনা দোষে তালাক দেয়াও একটি কৌশল হিসেবে গন্য। কুমিল্লার দেবিদ্বারের মায়ারা খাতুন এমনই এক ধরণের তালাকের শিকার। মায়ারা বলেন-ফুল শয্যার রাতে মহসিন বলেছিল”মায়ারা তুমি মায়ার সাগর,দিল দরিয়া । তোমার চোখে কখনও পানি আসতে দেবনা।সুখের সাগরে দুজন হাবুডুবু খাব।" ।

মার্চ মাসের সে দিনটির কথা তিনি ভুলতে পারেননা ।২০০৯ সালের ২৮ মার্চু দোবিদ্বারের মোহনা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে হাসিমুখে বের হয়ে যায় মায়ারার স্বামী মহসিন।বাসায় ফিরতে দেরি হওয়ায় ফোন করে মায়ারার মেয়ে সেতু ও শিমু। টেলিফোনে মহসিন বলে-”তোর মাকে শেষ করে দিয়েছি,তাকে বিদায় করে দিয়েছি তোর মাকে বলে দিস -সে যেন আমার সাথে কোন যোগাযোগ না রাখে।”

প্রতারিত মায়ারা জানান,তাকে বিয়ে করার আগেই মহসিন বিবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার সুর্যকান্দি গ্রামের শানু নামের ্এক মেয়েকে বিয়ে করে। বিনা দোষে তাকে তালাক দিয়ে মায়ারাকে বিয়ে করে। ২০০৯ সালে ঐ মেয়েকে আবার বিয়ে করে। মহসিন বর্তমানে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে (দপ্তর বিভাগ)উত্তর সোনাপুর (থানা-সুদারামপুর)পিয়ন পদে চাকুরি করছে। মোসাম্মৎ মায়ারা খাতুনের (৪৫)পিতা মৃত সৈয়দ জাকির উদ্দীন। তিনি জন্মসূত্রে বিবাড়িয়ার সরাইল থানার চানমনিপাড়ার বাসিন্দা। ৮৮ সালের ২০ মে কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার পৈরাংকুল গ্রামের মৃত আঃহক চৌধুরির পুত্র মহসিন চেীধুরির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।বর্তমানে ফারহানা চৌধুরি সেতু (২০)(বিবাহিত)এবং রোকসানা চৌধুরি সীমু নামে তার দুটি কণ্যা সন্তান রয়েছে।

মায়ারা জানান,তার চাকরি থেকে প্রাপ্ত সকল টাকা সংসারে খরচ করেছেন। বিয়ের মাত্র ৮/৯ মাস পর ৩৩ শতক যায়গা কিনে পৈরাংকুলে বাড়ি করেন। ৩/৪বছর পর ১০ লাখ টাকায় এ বাড়ি বিক্রি করা হয়। ২০০৩ সালে তারই টাকায় দেবিদ্ধার মোহনা আবাসিক এলাকায় আলম পাঠানের নিকট থেকে ৫শতক যায়গা কিনে ৩ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একতলার কাজ শেষ করেন।বাড়ি তৈরির সময় পৈত্রিক সম্পত্তি ১.৯০ শতক বিক্রি করে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা স্বামীর হাতে তুলে দেন।বাড়ির জমির দলিল মায়ারার নামে করার কথা থাকলেও চালাকি করে মহসিন নিজের নামেই করে ফেলে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে বিল্ডিংসহ বাড়িটি ২৪ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে সমুদয় টাকা মহসিন নিয়ে যায়।

মহসিনকে পাওয়ার জন্য মায়ারা তার নোয়াখালীর বাসায় ও গিয়েছেন। সেখানে যাওয়ার পর মহসিন মাস্তান দিয়ে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়েছে। নাবালক কণ্যাটি রেখে তাকে বিদায় করে দিয়েছে। মায়ারা নোয়াখালী যাওয়ার সুবাধে দেবিদ্ধারের ভাড়া বাসায় তালা ভেঙ্গে চেক বই নিয়ে জ্বাল স্বাক্ষর দিয়ে ২৫ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নেয়। এছাড়া ঘরের ফার্নিচার বিক্রি করে ভাড়া মিটিয়ে বাসা ছেড়ে দেয়।

ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী একজন স্বামী ইচ্ছে করলে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। তবে যাচ্ছেতাই ভাবে তালাক দেয়া যাবে না। এব্যাপাওে রাসূল (সা) বলেন-“তালাক হচ্ছে হালাল বস্তুর মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য বস্তু। ”একতরফাভাবে বিনা দোষে তালাক দেয়া কি নারী নির্যাতন নয়? একজন পুরুষ স্বৈরাচারের মতো একজন নারীকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে অন্যজনকে বিয়ে করে সুখের সংসার করবে এটা কেমন নিয়ম? মায়ারার এ প্রশ্ন সমাজের কাছে,জাতির কাছে,সচেতন মহলের কাছে। এর কি কোন প্রতিকার নেই? মায়ারাদের পাশে দাঁড়ানোর মত কি কেউ নেই।


Post a Comment

0 Comments