কুমিল্লার দেবিদ্বারে নার্সারির ব্যবসায় বহু যুবক স্বাবলম্বী
মমিনুল ইসলাম মোল্লাছোট ছোট নার্সারী থেকে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। কারণ একবর্গমিটার জায়গায় কয়েক হাজার চারা উৎপাদন করা যায়। অনেক চারা বিক্রয়ের উপযোগী করতে মাত্র ৩/৪ সপ্তাহ সময় লাগে। আগাম চারা উৎপাদন করতে পারলে লাভও কয়েকগুন বেড়ে যায়। একটি ভাল নার্সারী থেকে অল্প সময়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যায়। নার্সারি ব্যবসা করে কুমিল্লার অনেক বেকার যুবকের ভাগ্য বদলে গেছে। তারা অর্থের অভাব মোকাবিলায় বর্তমানে নার্সারির ব্যবসাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। বেকারত্বের অভিশাপ ঘুচিয়ে তাদের অনেকেই আজ স্বাবলম্বী। নার্সারির ব্যবসায় বর্তমানে নারীরাও এগিয়ে আসছেন। অনেক নারী আজ নার্সারি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার এলাহাবাদ, বানিয়াপাড়া, ভিড়াল্লা, বড় আলমপুর, বারুর, ধামতী ও উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গ্রামে বহু নার্সারির বাগান গড়ে উঠেছে।
দেবিদ্বারের বিভিন্ন নামর্সারি ঘুরে দেখা গেছে সেখানে আম্রপলি, হিমসাগর, ল্যাংড়া, হাইব্রিড, মেহগনি, জাম, কাঁঠাল, লিচু, লেবু, বরই, পেয়ারা, জামসহ বিভিন্ন প্রকার বনজ, ঔষধি ও ফলের চারা রয়েছে। বানিয়াপাড়ার রহিম নার্সারির আঃ রহিম জানান, তিনি দীর্ঘদিন বেকার ঘুরে বেড়িয়েছেন। বাবার জমিতে তেমন কোনো ফসল না হওয়ায় পরে তিনি নার্সারি করার সিদ্ধান্ত নেন। তার নার্সারিতে প্রায় ৫০ প্রকারের বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছ রয়েছে। এবার তিনি বেশ কিছু টাকার গাছের চারা বিক্রি করেছেন। আগামীতে প্রায় ১ লাখ টাকার গাছের চারা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। এভাবে উপজেলার অনেক যুবক ও অভাবী নারীরা নার্সারি ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। নার্সারি বাগান করে ইতিমধ্যে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
নার্সারি বিশেষজ্ঞদের মতে নতুন করে নার্সারি করতে হলে নি¤œলিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। এটি অবশ্যই কোন মহাসড়ক, শহর বা বাজারের পাশে অবস্থিত হতে হবে । যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বা রাস্তাঘাট ভাল নয় সেখানে নার্সারী স্থাপন করা উচিত নয়। নার্সারীর সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকতে হবে। নার্সারীতে সব সময় পানির প্রয়োজন বিধায় পানির উৎস থেকে নার্সারীর দূরত্ব বা সেচ-সুবিধা আছে কিনা তা বিবেচনায় আনতে হবে। পানি সেচ ও নিকাশের উন্নত ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। প্রয়োজনমত জমি ক্রয় করে বা লীজ নিয়ে প্রথমে সীমানা নির্ধারণ ও নার্সারীর চতুর্দিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে হবে। নার্সারীর একটি সুন্দর নামকরণ করতে হবে এবং সামনে সুবিধামত স্থানে আকর্ষনীয় একটি সাইনবোর্ড লাগাতে হবে।দেবিদ্বার নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি হাজী গোলাম নবী বলেন-øাহাবাদের আনোয়ার হোসেন ,বানিয়াপাড়ার আঃ রহিম, বারুরের জামাল হোসেন ১২০ শতক জমিতে নার্সারি কওে স্বনির্ভর হয়েছেন। দেবিদ্বারের নার্সারিগুলোতে দুর্লভ প্রজাতির গাছ রয়েছে। দিয়া নার্সারিতে ৩০ প্রকার, উপজেলা গেইটের পাশে অবস্থিত ভাই ভাই নার্সারিতে ১০০ প্রজাতির, হাজী গোলাম নবীর নার্সারিত ৭০ প্রজাতির গাছ রয়েছে। এখানকার মাটি ভাল হওয়ায় সহজেই ভাল ফলন পাওয়া যায়। বারুরের মহব্বত আলী দেবিদ্বারের নার্সারি ব্যবসায়ের অগ্রদুত। তিনি পাকিস্তান আমলে নার্সারি কওে পেসিডেন্ট আইয়ুব খানের নিকট তেকে পুরস্কার লাভ করেন। বর্তমানে তাঁর ছেলেরা ৪০ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত নার্সারিটি দেখাশুনা করছেন। একযুগ ধওে নার্সারি ব্যবসায়ের সাথে জড়িত রয়েছেন মমিনুল ইসলাম, মাহবুব অঅলম, নজরুল ইসলাম, কাউসার, আহমদ ,সামসুল হক, রুবেল হাসান, ও মুজিবুর রহমান জানান তারা নার্সারি ব্যবসায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনে সক্ষম হয়েছেন।
লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা,গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের ক্যাম্পেনার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক ও সাংবাদিক, কুমিল্লা।
0 Comments