আপনার মেয়েকে ধর্মীয় শিক্ষা দিন
মমিনুল ইসলাম মোল্লাবাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। আমাদের দেশের নারী সমাজ ইসলামী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। একটি আদর্শ সমাজ গঠনের জন্য প্রয়োজন আদর্শ যুবক-যুবতি। এক দল আদর্শ শিশু তৈরি করতে হলে আগে তেরি করতে হবে একদল ইসলামী শিক্সা সম্পন্ন আদর্শবতী মা। আর এ “মা ”কে গড়ে তুলতে হলে তাদেরকে অবশ্যই ইসলামী শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। একমাত্র ধর্মভীরু ও শিক্ষিত মা-ই সন্তানকে সুশিক্সা দিতে পারেন। মিথ্যা প্রবঞ্চনা, বেহায়াপনা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অবৈধ অর্থ উপার্জণ, অন্যের হক নষ্ট করা ইত্যাদি থেকে বিরত রাখতে পারে।একসময় মনে করা হতো, মেয়েরা মক্তবে গিয়ে শুধুমাত্র দেখে দেখে কোরান পড়া শিখতে পারলেই যথেষ্ট।
বাংলা কিংবা ইংরেজি শিক্ষার ব্যপারে কোন গুরুত্ব দেয়া হতো না। শুধু মাত্র ধর্মীয় জ্ঞানার্জণ করলেই চলবে না। সাথে সাথে অধুনিক জ্ঞানও দিতে হবে। যােেত করে তারা সব ধরণের সমস্যা সমাধানে সক্সম হবে। জাতীয় জীবনে ধর্মীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণসহ প্রয়োজনবোধে শালীনতা বজায় রেখে রুজি- রোজগারের ব্যবস্থাও করতে হবে। আগে আমাদের দেশে প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্সা মক্তবে দেয়া হতো। মেয়েদের জন্য বাড়িতে পর্দাঘেরা অবস্থায় বিশেষ ব্যবস্তা করা হতো। এখানে কোরান, হাদিস, নামাজ রোজার নিয়ম কানুন, পর্দা, পারিবারিক দায়িত্ব, নীতি-নৈতিকতা ইত্যাদি শিক্ষা দেয়া হতো।তখন মেয়েরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেত না। হাদিস শরিফে আছে, নারী তার স্বামী গৃহের কর্ত্রী তাকে তার অধিনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাই গিন্নি হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য তার যতটুকু জ্ঞান প্রয়োজন তা তাকে অর্জণ করতে হবে। যে নারী যত বেশি দায়িত্বশীল তার ধর্মীয় জ্ঞান এর পরিধি তত বেশি হওয়া উচিত। প্রশাসনে দায়িত্বশীল একজন নারীর জ্ঞান অবশ্যই গৃহর্ত্রীর চেয়ে বেশি হওয়া উচিত। তবে প্রত্যহিক জীবনে চলার জন্য পবিত্রতা, নামাজ, রোজা, গীবত, স্বামী ও সন্তানের পরিচর্যা, ইত্যাদি বিসয়ে প্রত্যেক মুসলিম নারীকে অবশ্যই জ্ঞান রাকতে হবে।
বর্তমানে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি ছাত্রীদের আগ্রহ বাড়ছে। এবেতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ২০১১ সালে মোট ছাত্রী সংখ্যা ছিল ১ লাক ৪৬ হাজার ৫৭১ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ১ লাখ ৩২ হাজার ২৮৮ জন। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় ইংরেজ শাসক ওয়ারেন হেস্টিংস প্রথম উপমহাদেশে ইসলামিক শিক্সার ব্যবস্থা করেন। তিনি ১৮৬৬ সালে কলকাতায় একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৪৭ সালে ঢাকায় এর একটি শাকা খোলা হয় , এটি এখন ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা নামে পরিচিত। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মাদ্রাসা শিক্সা বোর্ড। ১৯৫৭ সাল নাগাদ ৭২৬টি মাদ্রাসা গড়ে উঠে, ১৯৭১ সালে এ সংখ্যা ছিল ১০০০ আর ২০০৮ সালে তা ১৪ হাজার ৫১৮ তে উন্নিত হয়। বর্তমানে মুসলিম অভিভাবকগণ তাদের মেয়ে সন্তানদের মাদ্রাসা শিক্ষা গ্রহণে অনুপ্রাণিত করছেন। ২০০৮ সালে পরিচালিত এক পরিসংখানে দেখা যায় আলিয়া মাদ্রাসাগুরোতে ২৯ শতাংশ ছাত্রী এবং কওমী মাদ্রাসায় ৯ শতাংশ ছাত্রী লেখাপড়া করছে।এছাড়া হাফেজী মাদ্রসাসহ অন্যান্য ধরণের মাদ্রাসায় বহু ছাত্রী লেখা পড়া করছে। বাংলাদেশে যতগুলো পৃথক বালিকা বিদ্যালয় রয়েছে এর অর্ধেক ও বালিকা মাদ্রাসা নেই। যে সমাজে মেয়েদের জন্য পৃথক ধর্মীয় শিক্সার ব্যবস্থা নেই সেখানে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। আশার কথা বাংলাদেশেও বর্তমানে পৃথক মহিলা মাদ্রাসা স্থাপিত হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় সকল মাদ্রাসায় ছাত্রী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি মহিলা মাদ্রাসাগুলোতে মহিলা শিক্ষক নিয়োগেও সরকার যতœবান। ফলে ধীরে ধীরে হলেও মাদ্রসাগুলোতে ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০০৫ সালে ঢাকায় ২টি কওমী মাদ্রাসা ছিল মেয়েদেও জন্য।এ দুটি প্রতিষ্ঠান মেয়েদের দাওরা ডিগ্রি দিয়ে থাকে। দেশে প্রচলিত মহিলা মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে হবে। কুরআন ও হাদিসে শুধুমাত্র মহিলাদের উদ্দেশ্যে যেসব আদেশ ও নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেগুলোর অধ্যয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। মূলত এ বিষয়ে যা লিখা আছে মেয়েরা তা থেকেই ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতো। তখন মেয়েদের জন্য ১৬ বছর মেয়াদি অঅলাদা মাদ্রাসা কোর্স চালুর কথা কেউ ভাবে নি। এখন কিছু কিছু মাদ্রাসা এব্যাপারে অগ্রগামী হলেও নারী সংক্রান্ত বিষয়গুলো কে যথাযথভাবে গুরুতব দেয়া হয় না।
মাদ্রাসা শিক্ষা বাদে আমাদের সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায়ও ধর্মীয় বিধি-বিধান জানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আগে ইসলামিয়াত নামে একটি বিষয় মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের পড়তে হতো। এখন ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা নামে একই বিষয় তৃতীয় শ্রেণী থেকে ১০ ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। সহীহ হাদিসের আলোকে আলোচনাপূর্বক সিলেবাসে পরিবর্তন আনতে হবে। হাক্কানী আলেমদের ওয়াজ মাহফিল, শোনার মাধ্যমে মা-বোনেরা তাদের ধর্মীয় জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারেন। এসব প্রোগ্রামে মহিলারা যাতে নির্বিঘেœ অংশগ্রহণ করতে পারে সেদিকে আয়োজকদের খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমানে বহু মাহফিলে মহিলারা অংশ গ্রহণ করছেন। তাদের জন্য উপযুক্ত পর্দার ব্যবস্থার পাশপাশি আলোচ্য বিষয়ে যাতে মহিলাদের ইহকাল ও পরকালের জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। সে ব্যাপারে বক্তাদের বক্তব্য দিতে হবে। মহৎ ব্যক্তিদের জীবনী পড়লে দেখা যায়, তারা তাদের মায়ের ব্যাপারে গর্ব করে বলেছেন- তাদেও উচ্চ শিখড়ে আরোহনের পেছনে তাদের মায়েদেও অবদান অনেক বেশি। মূলত পারিবারিক জীবনে মায়ের চরিত্রই সন্তানদের মধ্যে অধিক কার্যকর হয়ে থাকে। কাজেই মেয়েদের শিক্ষা যদি ভাল হয় তারা একটি সমাজকে বদলে দিতে পারেন। এক কথায় একটি আদর্শ সমাজ গঠন করতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে ইসলামী শিক্সার ব্যবস্থা করতে হবে।
লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা,গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের ক্যাম্পেনার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক ও সাংবাদিক, ধর্মীয় গবেষক,সহকারী সম্পাদক,দৃষ্টান্ত ডট কম কুমিল্লা।

0 Comments