স্ত্রীর যৌন অধিকার পূরণে স্বামীর সচেতনতা

স্ত্রীর যৌন অধিকার পূরণে স্বামীর সচেতনতা

 মমিনুল ইসলাম মোল­া
 মানব জীবনের যৌন চাহিদা ইসলাম কর্তৃক স্বীকৃত। তবে অবাধ যৌনাচারে ইসলাম অনুমতি দেয় না। শুধুমাত্র স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে নির্দিষ্ট নিয়মে যৌনকর্ম করতে নিষেধ নেই। এক্ষেত্্ের  পুরষের যেমন যৌন চাহিদা মেটানোর অনুমতি আছে তেমনি নারীও স্বামীর নিকট তা চাইতে পারে। আর এ হক আদায় করা পুরুষের একান্ত কর্তব্য। আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবি (সাঃ) বলেছেন, যখন পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন সে যেন পরিপূর্ণভাবে ( সহবাস) করে। আর তার যখন চাহিদা পূরণ হয়ে যায় ( শুক্রস্খলন হয়) অথচ স্ত্রীর চাহিদা অপূর্ণ থাকে তখন সে যেন তাড়াহুড়া না করে। ( মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক) এছাড়া সঙ্গমকালে স্ত্রীকে উত্তেজিত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আল­াহর রাসুল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তির দুটি স্ত্রী আছে, কিন্তু সে তন্মধ্যে একটির দিকে ঝুঁকে যায় এরুপ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন তার অর্ধদেহ ধসা অবস্থায় উপস্থিত হবে ( আহমদ২/৩৪৭)। আল­াহতায়ালা বলেন, “ তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের শষ্যক্ষেত্র তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার করো (বাকারা-২২৩)। এ আয়াতের তাফসিরে “তাহফিমুল কোরানে ”বলা হয়েছে, আল­াহ সৃষ্ট প্রাকৃতিক নিয়ম নারীকে পুরুষের বিচরণক্ষেত্র হিসেবে তৈরি করেনি এবং তাদের উভয়ের মধ্যে জমি ও কৃষকের মতো একটি সম্পর্ক রয়েছে। জমিতে কৃষক  নিছক বিচরণ ও ভ্রমণ করতে যায় না। জমি থেকে ফসল উৎপাদন করার জন্যই সে সেখানে যায়।মানব বংশ ধারার কৃষককেও মানবতার এই জমিতে সন্তান উৎপাদন ও বংশধারাকে সমুন্নত রাখার লক্ষেই যেতে হবে। স্বামীর জন্য বৈধ যে ,সে তার স্ত্রীর সম্মুখভাগে যে দিক দিয়ে চায় সামনে বা পিছনের দিক দিয়ে সহবাস করবে। জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ইয়াহুদীরা বলতো যদি স্বামী স্ত্রীর পিছন দিক দিয়ে তার সম্মুখভাগে সহবাস করে তাহলে সন্তান ট্যারা হবে।( বুখারি ৮/১৫)
নবি (সাঃ) এর এক সাথে ৯ জন স্ত্রী ছিলেন। আটজনের সঙ্গে তিনি পালাক্রমে রাত্রি যাপন করতেন। আর একজনের সঙ্গে রাত্রি যাপনের কোন পালা ছিল না আর তার নাম ছিল সাউদা বিনতে যামআ (রাঃ) বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি নিজের পালায় ছাড় দিয়ে তা আয়িশা (রাঃ )কে দান করেছিলেন। ইসলামে নারীর যৌনতাকে কখনও অস্বিকার করেনি। তাই নারীর অনুমতি বাদে খাসি হয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। নিতম্বে সহবাস অবৈধ। খুযাইমাহ বিন সাবিত থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় এক ব্যক্তি নবি (সাঃ) কে মহিলাদের নিতম্বে সহবাস করা সম্পর্কে জিঙ্গেস করলো। নবি (সাঃ) উত্তর দিলেন, যে, বৈধ। অতঃপর সে যখন ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা করলো নবি (সাঃ) তাকে ডাকলেন,বা তাকে ডাকার আদেশ করা হলো, সুতরাং তাকে ডাকা হলো। নবি সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলে­ন, তুমি কেমন বলে­? কোন দুই ছিদ্রতে পিছন থেকে সম্মুখে হ্যাঁ এটা বৈধ , পেছন থেকে পেছনে বৈধ না। নিশ্চয় আল­াহ হক্ক এর ব্যাপারে লজ্জাবোধ করেন না। তোমরা মহিলাদের নিতম্বে সহবাস করবে না। (বাইহাকী ৭/১৯৬)  যে ব্যক্তি তার নিতম্বে সহবাস করবে সে অভিশপ্ত । (নাসাঈ)  ঋতুবতী অবস্থায়ও তার সঙ্গে সহবাস করা বৈধ নয়। পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে, তোমার কাছে হায়িজ ঋতু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও এটা অশুচি বা কষ্ট। কাজেই তোমরা হায়িজ অবস্থায় স্ত্রী গমন থেকে বিরত থাকে। ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হয়োনা যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায় (বাকারা-২২২)।সুরা বাকারার ২২৮ নং আয়াতে আল­াহ বলেন, “‘ আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে . তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী। ”আব্দুল­াহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত – রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- হে আব্দুল­াহ ! আমাকে কি এখবর প্রদান করা হয়নি যে তুমি রাতভর ইবাদতে দাঁড়িয়ে থাক এবং দিনভর সিয়াম পালন কর। আমি বল­াম হ্যা, আল­াহর রাসুল! তিনি বলে­ন, তুমি এরুপ করোনা, বরং সিয়াম ও পালন কর। ইফতার কর, রাত জেগে ইবাদত কর এবং নিদ্রাও যাও। তোমার শরীরেরও তোমার উপর হক আছে। তোমার চোখেরও তোমার উপর হক আছে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্ত্রীদের নিকট থেকে বিরত থাকার ব্যপারে সহিহ হাদিসে নির্দেশনা রয়েছে। বোখারি শরিফে বর্ণিত- ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা একদিন প্রত্যুষে দেখতে পেলাম নবি সাল­াল­াহু (আঃ) এর স্ত্রীগণ কাঁদছেন। এবং তাদের প্রত্যোকের সঙ্গে পরিবারের লোকজনও আছে। আমি মসজিদে গেলামএবং সেখানকার অবস্থা ছিল জনাকীর্ণ, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) সেখানে এলেন এবং নবি (সাঃ) এর উপস্থিত কক্ষে আরোহন করলেন এবং সালাম করলেন। কিন্তু নবি (সাঃ) কোন উত্তর দিলেন না। পুনরায় তিনি সালাম দিলেন কিন্তু সাড়া দিলেন না। আবার তিনি সালাম দিলেন, কিন্তু কেউ কোনরুপ জবাব দিলেন না। এরপর খাদিমকে ডাকলেন এবং তিনি ভেতরে প্রবেশ করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন আপনি কি আপনার স্ত্রীগণকে তালাক দিয়েছেন? তিনি বলে­ন , “না। ”  কিন্তু আমি শপথ করেছি যে, তাদের কাছে ১ মাস পর্যন্ত যাব না। নবি (সাঃ ) উনত্রিশ  দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে তাঁর স্ত্রীগণের কাছে গমন করেন। নারীর যেমন উচিত স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা তেমনি পুরুশদেরও উচিত নারীর সকল চাহিদার প্রতি খেয়াল রাকা। আবু হোরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুলুল­াহ সাঃ) বলেন, ঈমানওয়ালাদেও মধ্যে পরিপূর্ণ মুমিন সেই ব্যক্তি . যার আচার অঅচরণে তাপদেও স্ত্রীদেও কাছে উত্তম। (তিরমিযি ১০৭৯ ) লেখকঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  প্রভাষক ও সাংবাদিক, ধর্মীয় গবেষক, কুমিল­া।

Post a Comment

0 Comments