অভিবাসী নারী ঃ চাই নিরাপত্তা ও শ্রমের পূর্ণ মর্যাদা
মমিনুল ইসলাম মোল্লাঅভিবাসী নারী এবং তাদের পরিবারের অধিকার সংরক্ষণ সংক্রান্ত আর্ন্তজাতিক কনভেনশনে বাংলাদেশসহ ৩৭ টি দেশ স্বাক্ষর করেছে। বিদেশে বাংলাদেশের নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হওয়ায় ১৯৯০ সালে সরকার অদক্ষ ও আধা দক্ষ নারী শ্রমিক অভিবাসনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জাারি করে ।পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে ২০০৩ সালে সরকার নারী অভিবাসনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ।বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের কল্যাণে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক স্থাপন করে।এব্যাংকের মাধ্যমে নারী অভিবাসীগণ বিদেশে যাওয়ার আগে জামানতবিহীন ঋণ পাবেন , এখানে কম খরচে রেমিটেন্স পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে ।এছাড়া বিদেশে থেকে ফিরে এসে ঋণের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করতে পারবেন। একজন তরুণী দেশে তার স্বামী , সন্তান , মা-বাবা, অত্মীয়-স্বজন রেখে আয়-রোজগারের জন্য বিদেশের মাটিতে পা রাখেন। দেশের জন্য তার খারাপ লাগে ; তিনি কাজে মনযোগ দিতে পারেন না । ছোট সন্তানের কথা ভেবে নীরবে-নীরবে চোখ মুছেন, স্বামী কিংবা বৃদ্ধ বাবার কথা মনে পড়লে আনমনা হয়ে যান তবুও নির্দিষ্ট সময় বিদেশে থাকতে চান । এসব নারীরা বিদেশে বহু প্রতিকূলতা সহ্য করেও দেশের অর্থনীতিতে হাওয়া দিয়ে যান ।
বাংলাদেশের নারীরা সাধারণত গৃহকর্মী , গার্মেন্টস কর্মী , ক্লিনার , সেলসলেডি , নার্স ও অন্যান্য পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। বিদেশে কর্মরত নারী শ্রমিকরা যৌন নির্যাতন , শারীরিক নির্যাতন সহ বেতন কম দেয়া , দীর্ঘ সময় কাজ করানো , খেতে কম দেয়া , সহ নানা সমস্যা ভোগ করেন। ওকাপের প্রতিবেদনে বলা হয়- অভিবাসী নারী শ্রমিকদের ৮৫ শতাংশই কোন না কোন ভাবে নির্যাতনের শিকার হয় ।এর মধ্যে ২০ শতাংশ জোরপূর্বক নির্যাতনের শিকার হয় । ২০ শতাংশ নিজেরাইসম্পর্ক তৈরি করে নির্যাতনের শিকার হয় । তারাই এইডস /এইচ আইবিসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিতে থাকে। এরা দেশে এসেও নানা রোগের বিস্তার ঘঁটায় ।মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর গ্রামের লুৎফা (ছদ্দনাম) গৃহকর্মীর ভিসায় ৬ মাস আগে লেবানন যান। ১লাখ ৫০ হাজার টাকা দালালের হাতে দিয়ে তিনি সেখানে গৃহকর্মীর কাজ পান। কিন্তু লম্পট গৃহকর্তা তার উপর ৩ মাস নির্যাতন চালায় । বাংলাদেশের এজেন্সিতে যোগাযোগ করেও কোন মানসম্মত সেবা পান নি।আরেকজন হতভাগিনী নারী নাদিরা(২৮) । তার বাড়ি নওঁগা জেলার সতিহাটে ।তিনি ২২ ফেব্রæয়ারি ২০১১ লেবাননে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে ”বাংলাদেশ মাইগ্রেন্টস ফাউন্ডেশন ” এর সহযোগীতায় মে ২০১১ অসুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরে আসেন । এক জরিপে দেখা যায়, ২০১০ সালে যারা বিদেশে গেছেন তাদের অধিকাংশ অদক্ষ। মাত্র ০.০০৮ শতাংশ দক্ষ পেশাজীবি শ্রমিক , ৬৪ শতাংশ অপ্রশিক্ষিত শ্রমিক ।বিএমইটি মহিলাদের ১৫ দিন থেকে ১ মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এতে সে দেশের আবহাওয়া, আচার-আচরণ, কাজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে জ্ঞান দান করা করা হয়। জনশক্তি রপ্তানী ও প্রশিক্ষণ বুরোর পরিচালক ড.নুরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ৩৮টি প্রশিক্ষণ সেন্টার রয়েছে।তার মধ্যে ৬টিতে নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমটি) এর তথ্য অনুযায়ী ১৯৯১ থেকে ২০১১ সালের ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত মোট ১লাখ ৫৩ হাজার ৯৭৬ জন নারী কর্মী বিদেশে গিয়েছেন।নারী কর্মীদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২০০২ সাল পর্যন্ত ছিল ১% আর ।২০০৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫৭০ জন। এপর্যন্ত ২০ বছরে মোট বিদেশে গিয়েছেন দেড় লাখ নারী কর্মী ।দেশ ভিত্তিক হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছেন ৪৩ হাজার ২৫২ জন , লেবাননে ৪১ হাজার ৫৬২ জন সৌদি আরবে ৩১ হাজার ২৮৪ জন । এছাড়া জর্ডানে ৮ হাজার ১৬৯ জন এবং কুয়েতে ৭ হাজার ।রিফিউজি এন্ড মাইগ্রেটরী মুভমেন্ট এর চেয়ারম্যান তসনীম সিদ্দিকী বলেন-২০১০ সালে জনশক্তি রপ্তানি ২০০৯ এর তুলনায় ২১ শতাংশ কমে আসে । তবে নারী শ্রমিক রপ্তানীর উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কারণে অভিবাসন ১২ শতাংশ বেড়েছে। নির্যাতন বন্ধে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা এবং কার্যকর উদ্যোগের অভাব রয়েছে।মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরিন শারমিন চৌধুরি বলেছেন -নারী শ্রমিক বিদেশে পাঠানো বৃদ্ধি করার পাশাপাশি বিদেশে নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি আরো বলেন- নারী শ্রমিকের বেতন বৈষম্য দুর করাও জরুরী ।
লেখক: মমিনুল ইসলাম মোল্লা,প্রভাষক, ক্যাম্পেনার সিডিএলজি এবং সহকারী সম্পাদক , (দৃষ্টান্ত ডট কম), কুমিল্লা,
0 Comments