1. সহিহ হাদিসের আলোকে ঃ মহিলাদের জামআতে নামাজ
  2. মমিনুল ইসলাম মোল্লা,
  3. জামাতে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব ও ফজিলত বেশি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু কর । এখানে  রুকুকারীদের বলতে নামায জামাতের সাথে আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুরুষদের  মতো মহিলারাও মসজিদে অথবা বাড়িতে নামাজ পড়তে পারে। জামায়াতে নামায পড়ার জন্য আযান আবশ্যক ।
    মহিলাদের জামাতে নামাযের জন্য ও আযান দিতে হবে তবে এ আযান মহিলারা দিতে পারবেন না। কোন মহিলা পুরুষের ইমামতি করতে পারবে না। কিন্তু পুরুষ নারী  পুরুষ উভয়ই অথবা শুধু পুরুষ অথবা শুধু নারীর ইমামতি করতে পারবে। পুরুষ ১ জন হলেও ইমাম সাহেব একাকি সামনে গিয়ে দাড়াবেন। উম্মে সালমা (রা) ও আয়িশা (রা)নিয়মিত মহিলাদের নামাজে ইমামতি করতেন। ( মুসান্নাফ ইবে পাবি শাহবাহ খন্ড ২ পৃষ্ঠা ৮৮-৮৯ ) পুরুষ ও নারী একত্রে জামাতে নামায আদায় করলে প্রথমে পুরুষের কাতার থাকবে। পুরুষদের  কাতার শেষ হলে মহিলাদের কাতার শুরু হবে। মহিলা একজন হলেও আলাদা কাতার বানাতে হবে। ইমাম যদি মহিলা হন তাহলে তিনি পুরুষের  মতো সামনে গিয়ে দাঁড়াবেন না। মহিলা ইমাম সবসময় কাতারের মাঝখানে দাঁড়াবেন। বর্নিত আছে যে আয়েশা (র া) এবং উম্মে সালমা (রা ) যখন মেয়েদের ফরয সালাতে অথবা তারাবীহ এর  সালাতে জামাআতে ইমামতি করতেন , তখন তিনি তাদের  মাঝখানে দাঁড়াতেন। মহিলার া মসজিদে গিয়ে পুরুষদের সাথে জামাতে নামায আদায় করলে তারা আগে মসজিদ থেকে বের হবে। অন্যদিকে পুরুষেরা বের হবে মহিলারা চলে যাওয়ার  পর ।  হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর( রা) থেকে বর্নিত রাসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন তোমরা রাতের বেলা নারীদের কে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দাও । (বুখারি হাদিস নং ৮৯৯)  এ হাদিস দ্বার া প্রমাণিত হয় কোন মুসলমান পুরুষের স্ত্রী -কন্যা যদি মসজিদে যেতে চায় তাহলে গৃহকর্তা তাকে অনুমতি দিবে ।
  4. স্বরব কিরাত বিশিষ্ট সালাতে স্বরবে কিরআত পড়া সুন্নত। মহিলা ইমাম আবদ্ধ যায়গায় নামায পড়ালে স্বরবে কিরাত পড়তে পারে । একদিন আয়েশা ( রাঃ) মাগরিবের সালাতে মেয়েদের ইমামতি করেন তখন তিনি তাদের মাঝখানে দাড়ান এবং স্বরবে কিরআত পড়েন। (আইনী তুহফা সালাতে মোসগুল৩১পৃষ্ঠা) ইমামগণ সালাতে ভুল করতে পারেন। সহিহ বুখারি ১২০৩ নং হাদিসে বলা হয়েছে আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত । নবি সাঃ ্বলেছেন, ইমামের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পুরুষদের বেলায় তাছবিহ সুবহানাল্লাহ , আর মহিলাদের বেলায়  নিয়ম হচ্ছে এক হাতের তালু দিয়ে অন্য হাতে মারা। এভাবে মহিলা ইমামকে মুক্তাদিরা  সংকেত দিবে।  সহীহ বোখারীতে বলা হয়েছে , ইমাম নির্ধারণ করা হয় তার অনুসরণ করার জন্য। তাই যখন সে দাঁড়িয়ে নামায পড়বে তখন তোমরাও দাঁড়িয়ে নামায পড়,যখন সে উঠবে তখন তোমরাও উঠো (আযান অধ্যায় হাদিস ৬৮৯)।
  5. মুসলিম শরিফের ৪৪২ নং হাদিরছ বর্ণিত আছে ,আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর  (রাঃ) বলেছিলেন আমি রাসুল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি তোমাদের স্ত্রীগন যখন তোমাদের  কাছে মসজিদে যাওয়ার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে তখন তাদেরকে বাধা দিও না। তার ছেলে বেলাল বল্লেন,  আল্লাহর কসম অবশ্যই আমি তাদেরকে বাধা দেব। তিনি তার কাছে গিয়ে তাকে তিরষ্কার করলেন তাকে কটু কথা বল্লেন , যা তার কাছ থেকে আমি (বর্ণনাকারী সালেম বিন উমার ) কখনো শুনিনি।  মুসনাদে আবিওয়াতে এসেছে তিনে ছেলেকে এজন্য মেরে ছিলেন। ইামামের কর্ম বিষয়ক অংশগুলি ইমামের সাথে সাথে সম্পাদন করা উচিত। যেমন ইমাম  রুকু কর লে মুক্তাদিরা সাথে সাথে রুকু করবেন।  হযরত আবু হুমাইদ সায়েদী  (রাঃ) রাসুলুল্লাহ  (সাঃ) এর একদল সাহাবীর মধ্যে বল্লেন , আমি আপনাদের অপেক্ষা রাসুলুল্লাহ  (সাঃ) এর নামায অধিক স্মরণ রেখেছি। আমি তাকে দেখেছি তিনি তাকবিরে তাহরিমার সময় দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন।  রুকুর সময় দুই হাটু শক্ত করে ধরতেন। পিঠ ও ঘাড় সোজা       র াখতেন,  সিজদার সময় দুই হাত জমিনে না বিছিয়ে পেটের সাথে না মিশিয়ে এবং দুই পায়ের আঙ্গুল কেবলামুখি রাখতেন (বুখারি )।  মহিলাগন একাকী বা জামআত সহকারে জানাযা পড়তে পারেন। মেয়ের াও পর্দার মধ্যে জানাযায় শরিক হতে পারেন। আয়েশা (রাঃ) ও অন্যান্য উম্মাহাতুল মুমিনীন (রাঃ ) মসজিদে নববীর মধ্যে সাদ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ) এর লাশ আনিয়ে  নিজের া জানাযা পড়ে ছিলেন। (মুসলিম হাদিস নং ৯৭৩)  যদিও গৃহই হচ্ছে মহিলাদের বসবাসের জন্য উত্তম যায়গা তবুও প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মুসলিম মহিলাদের বাড়ির বাইরে যেতে হয়। বাড়িতে ফিরে নামাজের সময় নাও পাওয়া যেতে  পারে । ইচ্ছে করে কাযা করলে আল্লাহ মাফ করবেন না। তাই সময় মত নামাজ পড়ার জন্য প্রতিটি মসজিদে বিশেষ করে হাসপাতাল,রেলওয়ে স্টেশন,লঞ্চ টার্মিনালসহ জনবহুল যায়গায় মহিলাদের নামাজের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মহিলাদের নামাজের জন্য আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা করা হয়েছে । সিলেট এডুকেশন এন্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি পরিচালিত জালালাবাদ সেনানিবাস সংলগ্ন মসজিদ আল কাইয়ুম এন্ড ইসলামিক সেন্টার পশ্চিম বটেশ্বর বাজার । সিলেট এ জুম্মার নামাজসহ মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে। কুমিল্লার দেবিদ্বারের কয়েকটি মসজিদে মহিলাদেও জুম্মার নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জ্ঞানার্জন করা নারী পুরুষ সকলের জন্য ফরয। কিন্তু পুরুষদের  যেমন বাইরে গিয়ে জ্ঞান করার সুযোগ রয়েছে মহিলাদের তেমন কোন সুযোগ নেই । তাই মহিলাদের কে মসজিদে যেতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বিশেষ করে শুক্রবারে খুতবায় তারা উপস্থিত থাকলে তারা ঈমান ও আমল সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারেন ।লেখকঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  প্রভাষক ও সাংবাদিক, ধর্মীয় গবেষক, কুমিল্লা।


Post a Comment

0 Comments