ইতেকাফকারী মহিলার আল্লাহর নৈকট্য লাভ
মমিনুল ইসলাম মোল্লা
ইতেকাফ প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর জন্য সুন্নত। এসময় ইতেকাফকারী মহিলা সংসারের সকল কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকবেন। ইতিকাফের বিধান বাঁচিয়ে রাখে অহেতুক কথা-বার্তা মন্দ সংস্পর্শ ও অধিক ঘুম হতে। সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, সঠিক জিকির, ও দুয়ার মাধ্যমে ইতেকাফকারী নিজেকে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছার সুযোগ পায়। তাকওয়া অর্জণের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক দৃঢ় হয়। বিশেষ নিয়তে বিশেষ অবস্থায় আল্লাহতায়ালার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করাকে ইতেফাক বলে। নারীরা মসজিদে গিয়ে ইতেফাক করতে পারবেন। তবে নিজ গৃহে ইতেফাক করা উত্তম। ইতেফাক রমজান ছাড়া অন্যান্য সময়েও করা যায়। রাসূল (সাঃ ) একবার শাওয়াল মাসে ইতেফাক করেছেন বলে জানা যায়। রাসূল সাঃ এর সময় নারীরা মসজিদে ইতেফাক করেছেন। মহিলারা ইতেফাক করতে চাইলে স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। স্ত্রী অনুমতি চাইলে এব্যাপারে নিষেধ করা উচিত নয়। বরং এক্ষেত্রে স্ত্রীর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া উচিত। হযরত জয়নব বিনতে সালমা (রাঃ) বলেছেন প্রিয় নবী (সাঃ ) তার ঘরের লোকদের মধ্যে রাত জেগে ইবাদত বন্দেগী করতে সক্ষম এমন সবাইকে জাগিয়ে দিতেন। ইতেফাককারী রমনী রমজানের একুশতম রাত্রির সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে মসজিদে অথবা ঘরের নির্দিষ্ট যায়গায় চলে যাবেন। ইতেকাফ থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে উত্তম হলো চাঁদ রাত্রি নির্দিষ্ট যায়গায় অবস্থান করে ঈদের দিন সকালে ইতিকাফ থেকে মুক্ত হন। ইতিকাফের মাধ্যমে একজন নারীর অন্তওে প্রশান্তি আসে। বেশি বেশি কুরান তিলাওয়াত, কোরানের বাংলা অনুবাদ, হাদিস শরিফ বা ধর্মীয় বই পড়ে জ্ঞানার্জণের সুযোগ পান। তিনি আন্তরিকভাবে নিজের গোপন ও প্রকাশ্য পাপের কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে খাস নিয়তে তওবা করতে পারেন। তছাড়া রাতের নামাজ পড়তে তাদের কোন সমস্যা হয় না। সকল প্রকার নফল ইবাদতসহ সুন্দরভাবে তিনি তার সময়কে আল্লার পথে কাজে লাগাতে পারেন।
ইতেফাক অবস্থায় মহিলাদের হায়েজ-নিফাজ অবস্থা থেকে পবিত্র থাকা জরুরী। কেননা এ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করা হারাম। তবে ইস্তিহাজা অবস্থায় ইতিফাক করা যেতে পারে। বুখারি শরিফে (৩০৯) আছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সাথে তার জনৈকা স্ত্রী ও ইতেকাফ করলেন। তখন তিনি ছিলেন ইস্তিহাজা অবস্থায়, রক্ত দেখেছেন। রক্তের কারণে হয়তো তাঁর নীচে গামলা রাখা হচ্ছে।”পবিত্র মাহে রমজানের একটি বিশেষ রাত হচ্ছে শবে ক্বদরের রাত। এ রাতটি নির্দিষ্ট নয়। তাই এটি তালাশ করতে হবে। ইতিকাফকারী এ রাতটিকে অন্যান্য সময়ের চেয়ে ভালভাবে তালাশ করতে পারেন। তিনি প্রতি রাতে ইবাদত করলে কোন না কোন রাতে শবে ক্বদর পেয়ে যাবেন। ইতেকাফকারী মহিলাগণ ঘরের এক কোণে পর্দঘেরা অবস্থায় অথবা আলাদা কক্ষে অবস্থান করবেন। তিনি এক ওয়াক্ত নামাজ পড়ে অন্য ওয়াক্ত নামাজের জন্য অপেক্ষা করবেন। এ এ অপেক্ষায় ফজিলতে রয়েছে। আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল ( সাঃ) বলেছেন, নিশ্চয় ফেরেশতারা তোমাদের একজনের জন্য দুআ করতে থাকেন, যতক্ষণ সে কথা না বলে, নামাজের স্থানে অবস্থান করে। তারা বলতে থাকে আল্লঅহ তাকে ক্ষমা করে দিন। আল্লঅহ তার প্রতি দয়া করুন। যতক্ষণ তোমাদের কেউ নামাজের স্থানে থাকবে, ও সালাত তাকে আটকিয়ে রাখবে তার পরিবারের নিকট যেতে সালাত ছাড়া আর কিছু বিরত রাখবে না। ফেরেস্তারা তার জন্য এভাবে দুআ করতে থাকবে ( বুখারি ৬৫৯) ইতেফাককারীনী গোসল করা , চুল আাঁচড়ানো, তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার ভাল পোশাক পড়া এসবের অনুমতি আছে। ইতেফাককারীর সাথে পরিবারের লোকজন সাক্ষাত করতে পারবেন। কেননা রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রীগণ ইতেকাফরত অবস্থায় তার সাথে সাক্ষাত করতেন তবে দীর্ঘ সময় অবস্থান করতেন না। ইতিকাফ এমন একটি ইবাদত যা রসূল সাঃ মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে প্রতিবছরই করতেন। দাওয়াত, তরবিয়ত, শিক্ষা ও জিহাদে ব্যস্ত থাকা অবস্থায়ও তিনি ইতিকাফ ছাড়েন নি। ইতেকাফকারী নির্দিষ্ট কক্ষে খাওয়া দাওয়া করবেন, তবে যদি খাবার এনে দেয়ার কেউ না থাকে, তাহলে বিশেষ প্রয়োজনে এতেকাফকারীনী মূল ঘরে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করতে পারবেন তবে সেখানে অহেতুক গল্প-গুজব করতে পারবেন না। নবী (সাঃ) ও তাঁর স্ত্রীগণ ইতেফাক করেছেন। আয়েশা রাদিয়াল্লঅহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রমজানের শেষের দশকে ইতিকাফ করেছেন ইন্তেকাল পর্যন্ত, এরপর তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন। (বুখারি২০২৪, মুসলিম ১১৭২) ইতিকাফরত অবস্থায় বান্দ আল্লঅহর সান্যিধ্য লাভের সুযোগ পায়। এসময় সে আন্তরিকভাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে। এতে ঈমান বৃদ্ধি পায়। সকল নারী –পুরুষের উচিত রমজান মাসের শেষ ১০ দিনে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঈমানি চেতনাকে শানিত করে তোলার চেষ্টা করা।
লেখক: কলেজ শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট,কুমিল্লা।

0 Comments