স্মৃতির পাতাঃ আজ রাহেলার পরীক্ষা।।


স্মৃতির পাতাঃ আজ রাহেলার পরীক্ষা।।
পা থেকেও নেই, পোলিও খেয়ে ফেলেছে। তাতে কি হয়েছে? মনের জোর দিয়েই এগিয়ে চলছে। দেবিদ্বারের এলাহাবাদের রাহেলা আক্তার। আজ তার এইচ এইস সি পরীক্ষা। সে এবছর এলাহাবাদ মহা বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে। অন্যান্য /১০টি মেয়ের মতই দেবিদ্বার সুজাত আলী সরকারি কলেজে তার পরীক্ষা কেন্দ্র । হঠাৎ করে দেখলে সুন্দরী রূপবতী রাহেলাকে স্বাভাবিক বলেই মনে হবে। অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের মতো সে সীট থেকে উঠে গিয়ে কক্ষ পরিদর্শক থেকে অতিরিক্ত কাগজ চেয়ে আনতে পারে না। কেননা হাঁটতে হলে তাকে দু-পাকে এক সাথে করে হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটতে হয়
এলাহাবাদ  কলেজের ডেমোনেস্ট্রেটর মনির হোসেন ভূইয়া বলেন, রাহেলা তার ভাইয়ের সাইকেলে চড়ে নিয়মিত কলেজে আসতো । এবছর টেস্ট পরীক্ষায় ভাল ভাবে পাশ করেই এইচ এস সি পরীক্ষা দিচ্ছে। রাহেলার বাবা মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দীন বলেন !“আমার অন্যান্য ছেলে মেয়েদের মতই রাহেলা স্বাভাবিকভাবেই জন্ম গ্রহণ করে। নির্দিষ্ট সময়ে বসতে, দাঁড়াতে কথা বলতে শিখে রাহেলার বয়স যখন বছর তখন সে হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয়। সাধারন ঔষধ খাওয়ার পরও জ্বর কমেনি। তারপর এলাকার ডাক্তার বাদে দেবিদ্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে রাহেলা পঙ্গু হয়ে যায়
২০০৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর সাপ্তাহিকআমোদপত্রিকায় শারিরীক প্রতিবন্ধী রাহেলার দৃঢ় প্রত্যয় শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। তারপর স্থানীয় জাতীয় দৈনিকেরও নজর কাড়ে। বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর সমাজ সেবা কার্যালয়ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর লোকজন রাহেলার সন্ধান করতে শুরু করে। রাহেলাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে। রাহেলা যখন জানতে পারল তার রোগের কোন চিকিৎসা নেই। তখন প্রথম প্রথম মনটা বিষিয়ে উঠত। সবাই কি সুন্দর করে হাটছে দৌড়াচ্ছে, আর আমি কিছুই করতে পারছি না ।এখন ভাগ্যকে মেনে নিয়েছে রাহেলা। হাতের পাঁচ আঙ্গুল যেমন এক রকম হয়না দুনিয়ার অর্ধমৃত জীবন্ত কিংবদন্তী মার্কিন
বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিন্সের কথাও রাহেলা জানে, তাই সে মনোবল হারায় না। রাহেলা বলে আমার পা নেই তাতে কি হয়েছে ? আল্লাহ আমাকে হাত, চোখ, মেধা সব কিছুই দিয়েছেন। আমি এমবিবিএস পাশ করে ডাক্তার হবো।
এলাহাবাদ কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন- রাহেলা বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষা দিচ্ছে। সে খুব মনযোগী ছাত্রী এবং পরীক্ষায় ভাল| ফলাফল করার সম্ভাবনা রয়েছে। নিয়মিত কলেজে যাওয়া এবং লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য রাহেলা তার সহপাঠী , বন্ধু বান্ধব, শিক্ষক পিতামাতার অনুপ্রেরণা সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে।
 ।।মমিনুল ইসলাম মোল্লা ।।নিউজ আর্কাইভ থেকে সাপ্তাহিক আমোদ 16/04/2009


Post a Comment

0 Comments