গার্মেন্ট শিল্প বাংলাদেশেরআর্থনীতিরএকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ

গার্মেন্ট শিল্প বাংলাদেশেরআর্থনীতিরএকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ 

গার্মেন্ট শিল্প বাংলাদেশেরআর্থনীতিরএকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিছু অব্যস্থাপনারজন্য এখাতে প্রতি বছরই কিছুনা কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করেপ্রতি বছরই কোন না কোন গার্মেন্টসে আগুন লেগে শ্রমিকরা মারা যাচ্ছে। কোন শ্রমিক মারা গেলে তারপরিবারকে শান্তনা দেয়ারভাষা কারো নেই। তবে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া গেলে পরিবারটি হয়তো কিছুটা স্বাবলম্বী হতে পারে। কিন্তু মালিকদেরঅর্থলুলুপতারকারণে তা হচ্ছে না। সকল শ্রমিকেরনামে পৃথক পৃথক বীমা থাকারকথা থাকলেওতা বাস্তবে হচ্ছে না। কোন কোন কারখানা তাদেরপছন্দ মতো ২০ জন শ্রমিকেরনামে গ্রæপ  বীমা করেবায়ারদেরকাছে সাধু সাজছে। সূত্র জানায় বাংলাদেশে তৈরিপোশাক প্রস্তুতকারক ওরপ্তানিকারক সমিতি ( বিজিএমই ) এরসদস্যভূক্ত কাখানারসংখ্যা পাঁচ হাজারএবং এরবেশি হলেওমাত্র ২ হাজারতিনশ কারখানার২০ জন করেশ্রমিকেরনামে বীমা করা আছে। আগে বিজিএমই এরসাথে জীবন বীমা কর্পোরেশনেরচুক্তি ছিল। বর্তমানে চুক্তি রয়েছে বেসরকারিবীমা কোম্পানী ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সেরসাথে। অর্থাৎ যে কোন কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটলে তারমৃত্যু দাবী পরিশোধ করেথাকে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এ কোম্পানীরনির্বাহী পরিচালক ডঃ আশরাফ উদ্দিন মিডিয়া প্রতিনিধিদেও জানান, বিজিএমই   শ্রমিকদের¯¦ার্থে বীমা করেনা। তারা নিজেদেররক্ষা করতে দায়সারা বীমা করে। এটি শ্রমিকেরনিরাপত্তা বীমারনামে  “আইওয়াশ”  ছাড়া আরকিছুই নয়।  নূন্যতম ১০০ শ্রমিক রয়েছে এমন শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্রæপ বীমা করা বাধ্যতামূলক। আইনে বলা হয়েছে শ্রমিকদের বীমা দাবীর টাকা প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা আদায় করবেন। শ্রমিকদের পোষ্যরা এ টাকা ৯০ দিনের মধ্যে পাবেন। পূর্ববর্তী শ্রম আইনের ৯৯ ধারা অনুযায়ী কোন কারখানায় ২০০ জন শ্রমিক থাকলেই বীমা সুবিধা দেয়ার কথা ছিল সে আইন অনেক প্রতিষ্ঠানই মান্য করেনি। তবে আশার বিষয় শ্রমিকদের মৃত্যু দাবী আগের ১ লক্ষ টাকার পরিবর্তে ২ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। শ্রমিক নেতৃবৃন্দ  বলছেন সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো শ্রম আইন না মানলে মালিকদের সাজা দেয়া হয় না। কোন মালিক বড় ধরণের সাজা পেয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই। এব্যপারে আইনের ৩০ ধারায় কিছু জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। তাই তারা সামান্য কটি টাকা জরিমানা দিয়েই মুক্তি পেয়ে যাচ্ছেন। কঠোর শাস্তির বিধান থাকলে তারা আইন অমান্য করা থেকে বিরত থাকতেন এবং শ্রমিকদেরকে কারখানার ভেতরে পুড়ে মরতে হতো না। আইন অনুয়ায়ী প্রত্যেক শ্রমিকের নামে একটি কওে বীমা থকাতে হবে। যাতে কোনো শ্রমিক আহত অথবা নিহত হলে তার জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া যায়। কিন্তু বীমা করলে প্রিমিয়ামের টাকা দিতে হয় বলে শ্রমিকদের নামে আলাদা করে কোনো বীমা করেনা গার্মেন্টসগুলো। স¤প্রতি সাভার ধসের পাঁচটি গার্মেন্টসে নিহত হওয়া শ্রমিকদের নামে আলাদা কোনো বীমা আছে কিনা জানতে চাইলে বিজিএমইএর ডেপুটি সেক্রেটারি ফারজানা শিরিন জানান, সাভারের ঘটনায় নিহত এবং আহত শ্রমিকের সংখ্যা তিন হাজার ১২২ জন। এসব শ্রমিকদের নামে কোম্পানির পক্ষ থেকে বীমা রয়েছে। কারখানার তালিকা অনুসারে ৪৫ দিনেরমধ্যে নিহত, আহত এবং পঙ্গু ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এসব কথার সত্য তার জন্য কারখানাগুলোর কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, সব কাগজপত্র দেখানো যাবে না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ধসে পড়া রানা প্লাজার পাঁচ পোশাক কারখানার একটিতে ও শ্রমিকদের জন্য বীমার ব্যবস্থা নেই। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষেও (আইডিআরএ) সর্বশেষ তথ্য মতে, দেশে সীমিত আকাওে (গ্রুপ বীমা) মোট ১ হাজার ৬০০টি বীমা রয়েছে। এ সীমিত একটি বীমার অধীনে মোট ২০ জন কওে শ্রমিকদেও তালিকা রয়েছে।  এ বিষয়ে ডেলটা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বিজিএমইএ তো শ্রমিকদের জন্য কাজ করেনা। তারা নিজেদের রক্ষা করতে দায়সাড়া বীমা করে। এটি শ্রমিকের নিরাপত্তা বীমা নামে আইওয়াশ ছাড়া কিছুই না। সাভারে পাঁচটি কারখানার জন্য বিজিএমই এর পক্ষ থেকে পাঁচটি সীমিত বীমা করা হয়েছে। তিনি বলেন, রানা প্লাজায় নিহতদের মধ্যে কারখানা প্রতি ২০ জনকে এক লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। তিনি বলেন, সামান্য প্রিমিয়ামের কারণে বিজিএমই এর পক্ষ থেকে বীমা করা হয় না। মূলত বায়ারদের কাছে সার্টিফিকেট দেখাতেই গোষ্ঠী বীমা করে থাকে কারখানাগুলো। তবে বীমার সার্টিফিকেটে শ্রমিকেরসংখ্যা উল্লেখ থাকে না বলে ২০ জন শ্রমিকের জন্য চুক্তি কওে পুরো একটি ইউনিটের জন্য সার্টিফিকেট নেয়া হয়।  শ্রমিকদের মৃত্যু বীমা এক লাখ থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা করেছে বিকেএমই। গত ৩১ জানুয়ারি বীমা সুবিধা এক লাখ টাকা থেকে ২ লাখ টাকা করে সরকারী বীমা প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা করপোরেশনের গোষ্ঠী বীমার আওতায় এ চুক্তি করে বিকেএমইএ। এই স্মারক চুক্তিতে সই করেন বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান ওজীবন বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরীক্ষিত দত্ত চৌধুরী। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবারস্টাডিজের (বিআইএলএস) এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পোশাক খাতে শ্রমিক হত্যা, নির্যাতন সংঘর্ষ বেড়েই চলছে। গড়ে প্রতিমাসে ছয় জনেরবেশি শ্রমিক নিহত হচ্ছে। এদেরমধ্যে কেউ পুলিশ বা মালিকদের নির্যাতনে, কেউ আন্দোলন করতে গিয়ে গাড়ির চাপায় মারা গেছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহŸান জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডবিøউ গিবসন সিএমজি।  ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে তিনি এই আহŸান জানান। গার্মেন্ট শিল্পের বিকাশে অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে গার্মেন্টস সেক্টরের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই গার্মেন্টের সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে শ্রমিক কর্মচারীদের নিরাপত্তা ও অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা জোরদারকরতে হবে। এদিকে, হাইকমিশনারকে স্বাগত জানিয়ে স্পিকার বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন ওশ্রমিক কর্মচারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গার্মেন্টস খাতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকার এ খাতের উন্নয়নে সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কনভেনশন অনুযায়ী শ্রম আইন ওশ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকান্ডের পর শ্রমিকদের বীমা সুবিধা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তৎকালীন বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট শফিকুল ইসলাম বলেন, তাজরীন গার্মেন্টসের ঘটনা কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়। সাধারণত এত শ্রমিক একসঙ্গে কোন বছরই মারা যায় না। এজন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শ্রমিকের গ্রুপ বীমা করা হয়ে থাকে। জানা গেছে, ২০০১ সালে গার্মেন্টস শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত পঙ্গুত্ব বা মৃত্যুর কারণে আর্থিক ক্ষতিপূরণে বীমা সুবিধা প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়।  প্রথম কয়েক বছর বীমা কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গার্মেন্টস বীমা করারচুক্তি করত। কিন্তু প্রিমিয়াম না দিয়ে শুধু সার্টিফিকেট নেয়ার অভিযোগ ওঠায় ২০০৩ সালে সকল গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকদেও বীমার আওতায় আনতে দায়িত্ব নেয় বিজিএমইএ। ইউডি, ইউপিসহ বিজিএমইএ প্রদত্ত সব সুবিধা পেতে শ্রমিকদের বীমা সুবিধার আওতায় আনা বাধ্যতামূলক করে বিজিএমইএ। তখন থেকে শ্রমিকদেও বীমার দাবি নির্ধারণ করা হয় এক লাখ টাকা। অর্থাৎ কোন শ্রমিক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হলে বা মারা গেলে ওই শ্রমিক এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন।
১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২১৪টির মতো অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ৭০০ শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন এ তথ্য গার্মেন্টস মালিক সংগঠন বিজিএমইএ এবং অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনগুলোর দেয়া পরিসংখ্যান বলে পত্রিকা সূত্রের দাবি। আর আগুনে পুড়ে ভবন ধ্বসে অন্যবিধ কারণে প্রায় ২ হাজার শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে তিন দশকে। আহত হয়েছেন হাজার-হাজার। ২০০০ সালের ২৫ নভেম্বও নরসিংদী চৌধুরী নিটওয়্যারএ্যান্ড গার্মেন্ট লিমিটেডে আগুনে পুড়ে মারা যান ৫৩ জন শ্রমিক। এই বছরের ডিসেম্বরে নরসিংদীর শিবপুওে এক গার্মেন্টে অগ্নিকান্ডে নিহত হন ৪৮ জন শ্রমিক। ২০০১ সালে ৮ আগষ্ট ঢাকার মিরপুওে মিকো সুয়েটারলিমিটেডে আগুন লাগার পর পদদলিত হয়ে নিহত হন ২৪ জন শ্রমিক। ২০০৪ সালে ৩ মে মিসকো সুপারমার্কেট কমপ্লেক্সের এক গার্মেন্টে আগুন লেগে ৯ জন শ্রমিক মারা যান। ২০০৫ সালে ৭ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টে আগুন লেগে ২২ জন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেন।২০০৬ সালে চট্টগ্রামে এক গার্মেন্টসে আগুনে পুড়ে মারা গেছিল ৫৪ জন, তার২৪ ঘন্টা না কাটতেই ঢাকার তেজগাঁয়ে অবৈধভাবে সংস্কার চালানোর সময় ফিনিক্স ভবন ধ্বসে মারা গেছিল ১৮ জন গরীব শ্রমিক। এরআগে বছর, এই দুই ঘটনার মাত্র ৯ মাস আগে সাভাওে স্পেক্ট্রাম ভবন ধ্বসে মারা যায় ৮৬ জন মানুষ, ২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের একটি এস কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলে আগুনে ৯১ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যান। একই বছর ৯ ফেব্র“য়ারি গাজিপুরের যমুনা স্পিনিং মিলে আগুনে পুড়ে মারা যান ৬ জন শ্রমিক। একই বছর মার্চ মাসে সায়েম ফ্যাশন লিমিটেডে আগুনে ৩ জন শ্রমিক মারা যান। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে গজিীপুরের গরীব এ্যান্ড গরীব সুয়েটারফ্যাক্টরীতে অগ্নিকান্ডে ২১ জন শ্রমিক মারা যান। একই বছর ১৪ ডিসেম্বর আশুলিয়ায় হা মীম গ্রুপের গার্মেন্টে আগুনে পড়ে মারা যান ৩০ জন শ্রমিক। সর্বশেষে অগ্নিকান্ডে মৃত্যু ঘটলো ঢাকার আশুলিয়ার তাজরীন গার্মেন্টে। সরকারী হিসেবে ১১২ জন এবং বেসরকারী হিসেবে ১২৫ জন শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা রানা প্লাজার শত শত শ্রমিক মারা গেলেও মাত্র ১০০ জন বীমা সুবধার আওতায় ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। কারণ ইথারটেক্স, নিউওয়েভ, নিউ ওয়েভ বটমস, নিইওয়েভ স্টাইল, ফ্যান্টম ট্যাক লিমিটেডেরপক্ষ থেকে মাত্র ২০ জন করে শ্রমিকের নামে গ্রæপ বীমা করা হয়েছিল  তাই অন্যরা এ সুবধা পাননি। অথচ পত্যোক শ্রমিকের নামে বীমা থাকলে আহত ও নিহত সবাই এ সুবিধা পেত। তাই সংকট নিরসনে প্রত্যোক শ্রমিকেরনামে যৌথ বীমা করা উচিত।  

Post a Comment

0 Comments